তার নাম বৃষ্টি। সাধারণ মধ্যবিত্ত ঘরে মেয়েটির জন্ম। ছেলেবেলা থেকে কিছু মূল্যবোধকে আশ্রয় করে সে বড় হয়েছে। মধ্য কলকাতার এক ভাড়াবাড়িতে ব্যাঙ্ককর্মী সুদীপ্ত সেনমজুমদারের বউ হয়ে এল বৃষ্টি। শ্বশুরবাড়িতে তাকে থাকতে হয় শাশুড়ি কল্পলতা, সুদীপ্তর দাদা প্রদীপ্ত, বউদি মনামির সঙ্গে। এই বাড়িতে এসে বৃষ্টি আশ্চর্য হয়ে দেখে, মানুষ কেমন অক্লেশে অন্যায়ের সঙ্গে আপস করে, অন্যকে বঞ্চিত করে নির্দ্বিধায়, অনর্গল মিথ্যাভাষণেও লজ্জিত হয় না। মধ্যস্বত্বভোগী এই নির্লজ্জ মানুষগুলো অন্যায়ের স্তূপের উপর বসে থাকে নির্বিকার চিত্তে, চরম পরিতৃপ্তিতে। জীবনের এই অন্ধকারের সামনে দাঁড়িয়ে বৃষ্টি প্রতিবাদী হয়ে ওঠে। অথচ সে বিদ্রোহী নয়, নারীবাদীও নয়। শুধু কখনও মৃদু উচ্চারণে, কখনও হৃদয় দিয়ে সত্যকে প্রতিষ্ঠা করতে চায়। বৃষ্টির শ্বশুরমশাই দয়াময় একটি সংস্থার কাছে মৃত্যুপরবর্তী দেহদানের অঙ্গীকার করেছিলেন। কিন্তু দয়াময়ের প্রয়াণের পর তাঁর সেই ইচ্ছার কোনও মর্যাদাই দিল না তাঁর স্ত্রী-পুত্ররা। মানুষের নীচতা ও স্বার্থপরতা বৃষ্টিকে উদ্বেল করে তোলে। তার প্রতিবাদে শুরু হয় সংঘাত। অভিঘাতে আগুন জ্বলে ওঠে। সুদীপ্তদের বাড়িওয়ালা প্রণববাবু ও তাঁর স্ত্রী একটি বিশাল বাড়ির মালিক হওয়া সত্ত্বেও নামমাত্র ভাড়ার টাকায় জীবন নির্বাহ করেন। প্রায় অনাহারে, বিনা চিকিৎসায় কাটে বৃদ্ধ- বৃদ্ধার জীবন। বাড়িওয়ালা দীর্ঘকাল অসুস্থতার পর মারা গেলেন। বৃষ্টির কাছে এই ঘটনা খুন করারই শামিল। সে রুখে ওঠে, কিন্তু সুদীপ্তও তার পাশে এসে দাঁড়ায় না। এমন একের পর এক ঘটনায় বৃষ্টি যখন কল্পলতার সংসারের অন্তর্লোকটিকে অনাবৃত করে দেয়, সে সময়ই ঘটে যায় সেই অপ্রত্যাশিত অথচ অনিবার্য ঘটনাটি। বৃষ্টির সামনে তখন একটি মাত্র রাস্তা খোলা। বৃষ্টি কি সেই পথেই এগিয়ে যাবে? উপন্যাসটি শারদীয় আনন্দবাজার ১৪১৪ পত্রিকায় ‘হলাহল’ নামে প্রকাশিত।
[Source: Ananda Publishers]
Reviews
There are no reviews yet.