যা কিছু অসাধারণ, তাকে ঘিরেই কিংবদন্তী গড়ে তোলার স্বভাব আমাদের। তা সে ঘটনাই হোক, কি কীর্তি। কখনও সেই কিংবদন্তী এমনই উচ্ছ্বসিত, যার প্রতাপে অসাধারণ হয়ে ওঠে অলৌকিক; কখনও আবার তা উৎসারিত এমনই ঈর্ষা-কুৎসা থেকে, যার প্রকোপে অসাধারণের প্রকৃত মহিমারও ঘটে যায় খর্বতা। রবীন্দ্রনাথের ক্ষেত্রেও বারবার এমন ঘটেছে। তাঁর নানান কীর্তির স্বরূপ এই দু-ধরনের কিংবদন্তীর কুয়াশাতেই আচ্ছন্ন। বিশেষত, তাঁর নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তির ঘটনা। বহু জল্পনাকল্পনা, অপব্যাখ্যা, অপপ্রচার এবং কপট মূল্যায়ন এই অসাধারণ ঘটনাকে কেন্দ্র করে। সেদিন যেমন, আজও তেমনই। প্রতীচীতে রবীন্দ্রনাথের অভ্যুদয় এবং কবিখ্যাতির প্রসার সম্বন্ধে এখনও কোনও-কোনও মহলে শোনা যায় বহুবিধ রটনার নির্বিচার প্রতিধ্বনি। তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে এসব রটনার যথার্থতা যাচাই হয়নি। যাচাই অবশ্য সহজসাধ্য ছিল না। এ-কাজ করতে গেলে যেসব তথ্যের উদ্ঘাটন বিশেষভাবে জরুরি, বলা যায় অপরিহার্য, তার বহুলাংশই প্রচ্ছন্ন নেপথ্যলোকে, ইতস্তত ছড়ানো-ছিটানো। সেই সমূহ তথ্যের উদ্ধার বস্তুতই দুঃসাধ্য এক কর্ম। সেই বিপুল পরিশ্রমসাধ্য কাজটিই অতি বিরল কুশলতায় সম্পন্ন করেছেন সৌরীন্দ্র মিত্র। দীর্ঘদিনের নিরলস প্রচেষ্টায় রবীন্দ্রনাথের নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তির পুরো প্রেক্ষিতটিকেই নতুনভাবে আবিষ্কার করে এ-গ্রন্থে তুলে ধরেছেন তিনি। শুধু যে আনুষঙ্গিক প্রতিটি তথ্যকে উদ্ধার করেছেন তা নয়, যুক্তিসিদ্ধ আলোচনার নিরিখে সেই সমূহ তথ্যের অসামান্য বিচার-বিশ্লেষণও করেছেন তিনি এই বিপুলায়তন গ্রন্থে। খ্যাতি-অখ্যাতির সমূহ কিংবদন্তীর অবসান ঘটিয়ে উদ্ধার করে এনেছেন প্রকৃত রবীন্দ্রনাথের অদেখা এক মূর্তিকে। উচ্ছ্বাসের প্রাবল্যে আবৃত নয় তার স্বরূপ, অসূয়ার আতিশয্যে নয় খণ্ডিত। এই সূত্রেই নতুন আলোয় উদ্ভাসিত হয়েছে সমগ্র রবীন্দ্রসাহিত্যও। এ কাজ ইতিমধ্যেই সম্মানিত। দিল্লির নরসিংহ দাস পুরস্কার পেয়েছে এই গ্রন্থ। নানা কারণে দীর্ঘকাল অমুদ্রিত থাকার পর আদ্যন্ত পরিমার্জিত হয়ে নতুন সংস্করণে আবার প্রকাশিত হল এই সমাদৃত আনন্দ-গ্রন্থ।
[Source: Ananda Publishers]
Reviews
There are no reviews yet.