যে বয়েসে কবি যশোঃপ্রার্থিনী কোনো যুবতী লজ্জারুণ প্রণয় কিংবা তীব্র রোমান্টিক বিষাদের কবিতা রচনা করে, সেই বয়েসেই তসলিমা নাসরিন নারী-পুরুষের ভারসাম্যহীন জীবনযাপন, প্রেমের নামে প্রতারণা, মুগ্ধতার বদলে লোভের দৃষ্টি, আত্মসমর্পণের বদলে অবহেলা উপলব্ধির কবিতা লিখেছেন। ‘অতলে অন্তরীণ’ কিংবা ‘বালিকার গোল্লাছুট’-এর লেখাগুলি পড়লেই বোঝা যায়, নিছক যশের লোভেই তিনি কলম ধরেননি, বাধ্য হয়ে সহিষ্ণু ও নীরব নারী জাতির প্রতিবাদের ভাষা দিতে চান তিনি, নারী-পুরুষের সম-সম্মান প্রতিষ্ঠাই তাঁর লক্ষ। কিন্তু তসলিমার কবিতা নিছক ক্রোধ, প্রতিবাদ বা তিক্ততার নয়, বরং বেদনার এবং অভিমানের। তাঁর মধ্যে ভালোবাসার জন্য ব্যাকুলতা রয়ে গেছে। যদিও তিনি লেখেন, ‘পুরুষের অন্ধ অশ্লীলতা দেখে/মনে মনে দোযখের অনন্ত আগুনে পুড়ি সতীসাধ্বী নারী’, আবার তাঁর কবিতাতেই পাই, ‘একবার ভালোবাসলেই/সব ভুলে কেঁদে উঠি অমল বালিকা’। নারী জীবনের বঞ্চনা এবং পুরুষ-প্রাধান্য নিয়ে এর আগেও কিছু কিছু গল্প-কবিতা লেখা হয়েছে কিন্তু তসলিমার মতন এমন খোলাখুলি নিজের ব্যক্তিগত নির্মম অভিজ্ঞতা, নিজের শরীরে নখের দাগের কথা এত সার্থক শিল্পসম্মত ভাষায় আগে প্রকাশিত হয়নি। এই জন্যই তসলিমা অনন্যা।
[Source: Ananda Publishers]
Reviews
There are no reviews yet.