ইংরেজি আর ফরাসিতে যা Belles-Lettres, তা-ই বাংলায় ‘রম্যরচনা’। ‘ব্যক্তিগত প্রবন্ধ’ বা ‘লঘু নিবন্ধ’ও বলেন কেউ কেউ। সৈয়দ মুজতবা আলি বলতেন ‘মঞ্জুভাষা’। নাম যা-ই হোক, জিনিসটি কিন্তু নতুন কিছু নয়। সেই কোন্ কালে বাংলা গদ্যকে যিনি সাহিত্যের অঙ্গনে হাজির করেছিলেন, সেই বিদ্যাসাগর মশায়ের হাতেই এর জন্ম। তারপর প্রায় দেড় শো বছর কাটল। এই দীর্ঘ সময়ে বঙ্কিমচন্দ্র রবীন্দ্রনাথ থেকে শুরু করে আজ অবধি কত রথী-মহারথী বাংলা সাহিত্যের ভাণ্ডারটিকে পুষ্ট ও পূর্ণ করে গেছেন, এবং এখনও যাঁরা করে চলেছেন, তাঁদের প্রায় সকলেরই স্নেহ-প্রশ্রয় পেয়েছে শরৎ-আকাশের লঘুপক্ষসঞ্চারী নিরুদ্দেশ মেঘের মতো হালকা অথচ রমণীয় এই ঘরানার রচনা। লেখকের ব্যক্তিত্বের বিভায় ঝলমলে, ক্ষণে ক্ষণে রূপ আর রঙ বদলের খেলায় অপরূপ অথচ চিরন্তনের মাধুরীঋদ্ধ এই রচনাগুলি অনেক সময়ে গল্প-কাহিনীর চেয়েও যেমন অনেক বেশি আকর্ষক, তেমনি অনেক বেশি মাধুর্যময় কবিতার চেয়েও। স্রষ্টার আনন্দ-সন্ধান আর সৃষ্টি-বাসনার মিলনসম্ভূতা এই তিলোত্তমা আজও অমৃতরস বিতরণরতা রসিক পাঠকসমাজে। রম্যরচনার সঙ্গে তুলনা চলে অনায়াসেই আধুনিক গানের। সর্বভারতীয় সংগীত সম্মেলনের আসরে আধুনিক গানের যেমন শিরোপা জোটে না, কিন্তু জনগণের হৃদয়ে আসন তার পাকা, রম্যরচনাও তেমনি । জ্ঞানী-গুণী-পণ্ডিত-সমালোচকের দরবারে রম্যরচনার স্থান কুণ্ঠিত হলেও, জনমনোহারিণী গুণে সে পাঠক সাধারণের হৃদয়হরণী। একমাত্র ছোটগল্প ছাড়া এ ব্যাপারে তার সমকক্ষ আর কেউ নয়। নির্ভার তাৎক্ষণিক রসভোগের পরতে পরতে মজাতে পারে একমাত্র রম্যরচনাই। বিদ্যাসাগর থেকে শুরু করে আজকের জয় গোস্বামী পর্যন্ত মোট আটষট্টিজনের লেখা আটষট্টিটি হীরকদ্যুতিবর্ষী মন-ধাঁধানো রচনার প্রাণ-ভরানো তোড়া এই সংকলন-গ্রন্থ—যা গত দেড় শো বছরের বাংলা সাহিত্যে রম্যরচনার বিবর্তনধারাটির একমেবাদ্বিতীয়ম্ কালানুক্রমিক দলিল তো অবশ্যই।
[Source: Ananda Publishers]
Reviews
There are no reviews yet.