রবীন্দ্রনাথের ‘রবীন্দ্রনাথ’ হয়ে উঠতে, তাঁর শৈশবের লেখালেখি ও সাহিত্যসৃজনে যে খাতাটি ছিল তরুণ কবির প্রতিদিনের প্রিয় সঙ্গী- রবীন্দ্রসাহিত্যের ইতিহাসে সেই বহু খ্যাত বহু আলোচিত খাতাটির নাম মালতীপুঁথি। তাঁর ছেলেবেলায় এর আগের দুটি খাতা শৈশবেই হারিয়ে গিয়েছিল। প্রথমটি ছিল ‘নীল কাগজের খাতা’। ‘জীবনস্মৃতি’তে কবি লিখেছেন, ‘তাহাতে স্বহস্তে পেন্সিল দিয়া কতকগুলা অসমান লাইন কাটিয়া বড়ো বড়ো কাঁচা অক্ষরে পদ্য লিখিতে শুরু করিয়া দিলাম।’ অতঃপর ‘সেই ছিন্নবিচ্ছিন্ন নীল খাতাটি বিদায় করিয়া একখানা বাঁধানো লেটুস্ ডায়ারি সংগ্রহ করিয়াছিলাম।’ তাতে ‘পৃথ্বীরাজের পরাজয়’ বলে একটা বীররসাত্মক কাব্যও লিখে ফেলেছিলেন। কবি শৈশবের স্মৃতিচারণ করে বলেছেন, ‘তাহার প্রচুর বীররসেও উক্ত কাব্যটাকে বিনাশের হাত হইতে রক্ষা করিতে পারে নাই। তার উপযুক্ত বাহন সেই বাঁধানো লেট্স্ ডায়ারিটিও জ্যেষ্ঠা সহোদরা নীল খাতাটির অনুসরণ করিয়া কোথায় গিয়াছে তাহার ঠিকানা কাহারো কাছে রাখিয়া যায় নাই।’ এই দুটির পরবর্তী খাতা মালতীপুঁথি কবির শৈশব থেকে প্রাক্যৌবনপর্বের নিত্য সহচর ছিল। এটিও হারিয়ে গিয়ে বিস্মৃতিলোকে চলে গিয়েছিল। কবির প্রয়াণের পর এই খাতাটি উদ্ধার হয়। কবির সাহিত্যসৃষ্টির উন্মেষপর্বের বহু মূল্যবান রচনা বা রচনার প্রাথমিক খসড়া এই খাতার পাতায়-পাতায় কবির স্বহস্তাক্ষরে লিপিবদ্ধ রয়েছে। এই পাণ্ডুলিপিতে আছে রবীন্দ্রনাথের লেখা বহু কবিতা, খণ্ড কাব্যের অংশ, অনেক গান, কিছু গদ্য-রচনা, সংস্কৃত ও ইংরেজি থেকে বাংলা অনুবাদের অনুশীলন, ছেলেবেলার প্রাত্যহিক রুটিন, কবিতার অন্তর্গত বহু কাটাকুটি, বর্জিত পাঠ, অপ্রকাশিত রচনা, নিজের স্বাক্ষরের মক্শ, কিছু হিজিবিজি লেখা এবং শৈশবের আঁকা কয়েকটি ছবি। নানা দিক থেকে এই পাণ্ডুলিপি রবীন্দ্রচর্চার ইতিহাসে এক অতি মূল্যবান দুর্লভ সামগ্রী রূপে বিবেচিত হয়ে এসেছে। বিশ্বভারতীর প্রাক্তন রবীন্দ্র-অধ্যাপক প্রখ্যাত রবীন্দ্র-গবেষক অমিত্রসূদন ভট্টাচার্যের সুযোগ্য সম্পাদনায় রবীন্দ্রনাথের সেই বিশ্রুত মালতীপুঁথি এই প্রথম গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হল।
[Source: Ananda Publishers]
Reviews
There are no reviews yet.