সরকারি অফিস আর তার আমলা কেরানি, লাল ফিতের জট দুর্নীতি-চক্র প্রোমোশন-ট্রান্সফার, রহস্য, রাজনৈতিক চাপ, নোটচালাচালির মাহাত্ম—এসব ব্যাপারে সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের দখল আলাদা রকমের। চাক্ষুষ অভিজ্ঞতা তো ছিলই, আর ছিল সেই চক্ষুতে কিঞ্চিৎ কৌতুক ও বেদনা মিশিয়ে তাকানো। ফলে তাঁর এই নতুন উপন্যাস ‘শঙ্খচিল’-এ তিনি যখন চালচিত্র হিসেবে বেছে নেন সরকারি এক অফিস, তার স্বাদই যায় বদলে, জীবন্ত ও সরস এক ছবি ফুটে ওঠে চোখের সামনে। শুধু কি সরস? শ্লেষ-কৌতুকের ছদ্ম-আবরণ সরালে এক ভয়ংকর অবক্ষয়ের, ভেঙে পড়া মূল্যবোধের ছবিও কি স্পষ্ট হয়ে ওঠে না? ওঠে। বস্তুত, শুধু প্রশাসনের ন্যায়-নীতিবর্জিত চেহারাটা ফুটিয়ে তোলাই এ-লেখার লক্ষ্য নয়, আধুনিক জীবনের অন্তঃসারশূন্যতা, অসামঞ্জস্য, অসঙ্গতি, এবং গোপন যন্ত্রণাকেই ধরতে চেয়েছেন সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় কেন্দ্ৰচরিত্র সমীরের মধ্য দিয়ে। শঙ্খচিলের নিজস্ব শক্তির ওড়াউড়ি আর স্বাধীনতাপ্রিয়তার চেয়ে সমীর যখন আবিষ্কার করে যে, অন্ধকারে শঙ্খচিল হয়ে বেঁচে থাকা যায় না, এ-জন্য চাই প্যাঁচার চোখ আর বাজপাখির ডানা, তখন তার সেই আত্মানুসন্ধানের সঙ্গী হয়ে পাঠকও পৌঁছে যান এক মহত্তর চেতনায়। সেখানেই এ-উপন্যাসের সার্থকতা।
[Source: Ananda Publishers]
Reviews
There are no reviews yet.