কথাসাহিত্যিক বিমল করের স্বতন্ত্র সৌন্দর্যে বরাবর মুগ্ধ সাহিত্য-পাঠকেরা। বহমান জীবনের গভীরতাকে খুঁজেছেন লেখক তাঁর রচনাধারায়। ‘অপরাহু’ উপন্যাসে চারটি চরিত্রই নিজেদের জবানিতে কথা বলেছে। মা, ছেলে, মেয়ে এবং এক বয়স্ক মানুষ। চল্লিশোত্তর বয়সে মা চরিত্রটি এক ব্যক্তিগত সমস্যার মুখোমুখি হন। তাঁর সংকট হয়ে দাঁড়ায় অন্যদেরও সংকট। মনোবিশ্লেষণে বিমল করের দক্ষতা বিস্ময়কর। অতি বিখ্যাত ‘বালিকা বধূ’ এই খণ্ডে সংকলিত, যাকে লেখক ‘এটি দীর্ঘ কাহিনী, উপন্যাস নয়’ মনে করেছিলেন, কিন্তু উচ্চস্তরের দার্শনিকতা রচনাটির কলেবরের ক্ষীণতাকে কবেই ধুয়ে-মুছে দিয়েছে। চলচ্চিত্র হিসেবেও অতি জনপ্রিয় ‘বালিকা বধূ’ মধুর বাল্যপ্রেমের কাহিনিই শুধু নয়, আজকের পাঠকের কাছে তা হয়ে উঠেছে ক্লাসিক। ‘একদা কুয়াশায়’ উপন্যাসটির বৈশিষ্ট্যই এই, এটি আপাদ-মস্তক রহস্য-উপন্যাস, কিন্তু কোনও গোয়েন্দা চরিত্র নেই। ‘অপ্রবাস’ উপন্যাসের লালু যে-বাস্তুভিটের মায়ায় আজন্মকাল জড়িয়ে আছে, সেখান থেকে তাকে হঠাৎ উৎখাত হতে হবে? লালুর বিপন্নতার কাহিনি পাঠককে বিচলিত করে। ‘রত্ননিবাসে তিন অতিথি’ রচনাটি চরিত্রে থ্রিলার হলেও বলা যায় এক মানবিক রহস্য-কাহিনি। ‘দিনান্ত’ উপন্যাসে আবার খেলা করে মায়াবন্ধন। গোলাপবাগান, যাকে সবাই মল্লিকবাড়ি বলেই চেনে, সেই বাড়ির মানুষজনই এই উপন্যাসের উপকরণ। ক্ষয়িষ্ণু এক বনেদি বাড়ির আশ্চর্য আলেখ্য রচনা করেছেন বিমল কর, যা পাঠকের হৃদয়ে পৌঁছে দেয় ভালবাসার চোরা টান। ‘জনৈক শয়তানের পত্রগুচ্ছ’ রোমাঞ্চকর রহস্য-কাহিনি, যেখানে নায়ক নিজেই মনোবৈজ্ঞানিক রোগী। মানুষের জীবনের বহুবর্ণ রহস্য, পাপ, গ্লানিবোধ, জটিল অবচেতনকে সন্ধান করেছেন ব্যতিক্রমী এই লেখক। ‘চন্দ্রগিরির রাজকাহিনী’ রাজসিক কাহিনি হয়েও যেন অন্যরকম। চন্দ্রগিরির রাজসিংহাসন কে পাবে, এই কৌতূহল পাঠককে ব্যস্ত রাখলেও মানবিকতার অপূর্ব স্পর্শে লেখক রচনাটিতে অন্য গরিমা এনেছেন। ‘সরসী’ উপন্যাসের সরসীর স্বামী রাজমোহন মৃত। মধ্য-চল্লিশের এই নারীর জীবনে আসে এক পুরুষ। শুরু হয় সরসীর আত্মানুসন্ধান। অস্তিত্বের বিপন্নতার কথায় শেষ বেলার আলো মাখিয়ে এক জাদুপৃথিবী তৈরি করতে পারতেন বিমল কর। মনস্তত্ত্ব তাঁর প্রিয় বিষয়। সম্পূর্ণ ভিন্ন স্বাদের ন’টি উপন্যাস নিয়ে এই ‘উপন্যাস সমগ্র’র অষ্টম খণ্ড বইপ্রেমিকদের কাছে এক অমূল্য সংগ্রহ।
[Source: Ananda Publishers]
Reviews
There are no reviews yet.